ভালবাসা ও নিউরোসায়েন্স

ভালবাসা ও নিউরোসায়েন্স

লিখেছেন
মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ
অধ্যাপক
ফিলাডেলফিয়ায় থমাস জেকারসন বিশ্ববিদ্যালয়
ইউএসএ

আমরা যখন প্রেমে পড়ি, তখন মস্তিস্কের মধ্যে শুরু হয় নানা রকমের ক্রিয়াবিক্রিয়া। মস্তিকের
নিউরন কোষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে নানা
রকমের নিউরোহরমন বা নিউরোট্রান্সমিটার তৈরীতে যা সারা শরীরে ঝড় বইয়ে দেয়
মুহুর্তের মধ্যে। এই
নিউরোট্রান্সমিটার মস্তিস্কের
এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত বা শরীরের বিভিন্ন প্রান্তে বার্গ
পৌঁছে দেয় এক নিউরন থেকে অন্য নিউরনে।

আমরা প্রিয়ার চোখের গভীরে
যখন তাকাই, মস্তিকের নির্দেশে
তৈরী হয় (advenaline) ) এড্রেনালিন নামক হরমন। ঘামতে থাকে হাতের
তালু, হার্ট চলতে থাকে ঝড়ের বেগে, ছোট হতে থাকে শ্বাস প্রশাস, চোখের দৃষ্টি হয় প্রসারিত। ঠিক তখনই মস্তিস্কের (amygdale)
এ্যামাইগডালা যা কিনা
আমাদের ইমশোনকে নিয়ন্ত্রণ করে তার কার্যক্ষমতা বহুগুনে বেড়ে
যায়, আমাদের রোমাঞ্চিত করে।
এমনই মুহুর্তে মস্তিস্কের (Pituitary)
পিটুইটারী তৈরী করে (Dopamine) ডোপামিন যা আমাদের হৃদয়ের
মধ্যে আনন্দের বন্যা বইয়ে দেয়।
এরপর মস্তিস্কের (Hypothalamus)
হাইপোথালামাস তৈরী করে
(Oxytocin) অক্সিটোসিন নামক
নিউরোট্রান্সমিটার যা কিনা
প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে এক
ধরনের সেতু বন্ধন তৈরী করে দিয়ে
মায়ায় বেধে ফেলে। এই পুরো
ঘটনাটি ৯০ সেকেন্ড থেকে ৪
মিনিটে ঘটতে পারে।


মস্তিস্ক বিজ্ঞানীরা প্রেমে
পড়া এই মস্তিস্কের ক্রিয়া-
বিক্রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ
করছেন।

প্রথম স্তর হচ্ছে
ভালালাগা। আমাদের সেক্স
হরমোন (Testosterone) টেস্টস্টেরন ও
(Estrogen) ইস্ট্রেজেন এর মাত্রা
শরীরে বেড়ে গিয়ে এই আবহ
তৈরী করে।

দ্বিতীয় স্তর হচ্ছে মোহ। এই স্তরে
মস্তিস্কের নিউরন থেকে নিউরনে
বার্তা বহনকারী (Neurotransmitter)
তৈরী হয় তিন ধরনের। এরা হচ্ছে
(Adrenaline) এড্রেনালিন, (Dopamine)
ডোপামিন ও (Serotonin)
সেরোটোনিন আমরা হঠাৎ প্রেমে
পড়লে মস্তিস্কের নির্দেশে
তৈরী হওয়া Adrenaline আমাদের
হৃদস্পন্দনকে বাড়িয়ে দেয়, রক্তচাপ
বেড়ে যায়, মুখ শুকিয়ে যায়। কিন্তু
এক ধরনের ভাললাগাবোধ তৈরী
হতে থাকে। আর এই ভাললাগাবোধ
তৈরী হয়, মস্তিস্কে পিটুইটারি এই
Dopamine তৈরী করে। Dopamine আমাদের
ভাললাগাবোধকে বহুগুনে
বাড়িয়ে দেয়। কোকেইন খেলেও
একই ধরনের অনুভুতি আমরা পাই। এই
স্তরে আর একটি পদার্থ তৈরী হয়
যার নাম সেরোটনিন। নতুন কোন
ভালবাসায় পড়লে সবসময় প্রিয়ার
কথা মাথায় আসে, তাকে সরানোই
যায়না। সেটা ঘটে এই এর মধ্য Serotonin
দিয়েই।

প্রেমে ৩য় স্তর হচ্ছে নির্ভরতা

প্রথম ও দ্বিতীয় স্তর অনেকটা
পাগলা তৃতীয় মী অথবা বলা যেতে
পারে ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণহীনতা।
ক্রমান্বয়ে ভালাবাসায় এক
নান্দনিক সুখ ও তৃপ্তি চলে এলে
পারস্পরিক আস্থা তৈরী হয়। তারপর
হয়ত বিয়ে বা সারাজীবনের জন্য
একসঙ্গে থাকা। এই আস্থা বা
নির্ভরতা তৈরী করতে যে দুটি
neurotransmitter বা নিউরন থেকে
নিউরনে বার্তা বহন কারী
পদার্থের অবদান তা হচ্ছে (Oxytocin)
অক্সিটসিন ও (Vasopressin)
ভেসোপ্রেসিন। মস্তিস্কের
পিটুইটারি এই Oxytocin তৈরী করে।
এটার ভূমিকা হচ্ছে প্রেমিক-
প্রেমিকার মধ্যে শক্তিশালী
মায়া তৈরী করা। ভালবাসার
মানুষকে যখন আমরা জড়িয়ে ধরি
বা স্পর্শ করি তখনই তৈরী হয় Oxytocin
যা দীর্ঘস্থায়ী বন্ধন তৈরী করে
দেয়। মা ও শিশুর মধ্যে যে বন্ধন
তাও নাকি এই Oxytocin এর অবদান।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা স্থায়ী
ভালবাসায় Vasopressin এর অবদান এর
কথাও বলেছেন, যদিও এটির প্রধান
কাজ কিডনির মাধ্যমে তৃষ্ণা বা
পিপাশা নিয়ন্ত্রণ করা।

0 comments: