মহাবিশ্বে প্রাণের সন্ধান নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল । এলিয়েন’র খোঁজ শুরু করছেন বিজ্ঞানীরা ,তা-ও আবার ৮০০ কোটি টাকা খরচ করে?
কিন্তু আদৌ কি আমরা ছাড়া কেউ আছে?
এই মহাবিশ্বে আমরা কি একা?
এই নিয়ে আমরা প্রথমে দুইটা তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করবো
১) ফার্মি প্যারাডক্স
২) ড্রেকের সূত্র
ফার্মি প্যারাডক্স: ফার্মির প্যারাডক্স/হেঁয়ালি হল বহির্জাগতিক সভ্যতা থাকার উচ্চ সম্ভাবনার বিপরীতে
আপাতদৃষ্টিতে এর কোন নিদর্শন না পাবার, অথবা ভিন্ন কোন সভ্যতার সাথে মানুষের
যোগাযোগ না হবার হেঁয়ালি।
মহাবিশ্বের বয়স এবং এতে অবস্থিত বিপুল পরিমাণ তারকারাজির সংখ্যা নির্দেশ
করে যে, পৃথিবীর মতো গ্রহ যদি
সাধারণ হয়, তবে বহির্বিশ্বিক প্রাণও তেমনই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। ১৯৫০ সালে
পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মি একবার কথায় কথায় মন্তব্য করেন,
"""মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে
প্রাণ যদি এতই সহজলভ্য হবে, তবে
কেন এখনো কোন গ্রহান্তরের
মহাকাশযান অথবা স্পেসপ্রোব
দেখা যায় নি"""
এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা শুরু হয় যখন
১৯৭৫ সালে মাইকেল এইচ. হার্ট এর ওপর একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেনযা ফার্মি-হার্ট হেঁয়ালি
নামে পরিচিত।এরকম আরো একটি আলোচিত বিষয় হল অসীম নিস্তব্ধতা —
""""যদি ভ্রমণ
অপেক্ষাকৃত কঠিন হয়ও, কিন্তু
প্রাণ তো আছে, তবে কেন আমরা
কখনোই পৃথিবীর বাইরে বুদ্ধিমান
প্রাণীদের কোন রেডিও
ট্রান্সমিশন ধরতে পারিনি?"""
হার্টের মতানুসারে, এখন পর্যন্ত বহির্বিশ্বিক প্রাণ এবং এর সম্ভাব্য বিভিন্ন মডেল নিয়ে
প্রচুর বৈজ্ঞানিক ধারণা তৈরি করা হয়েছে, এবং ফার্মি হেঁয়ালি এ সংক্রান্ত কাজের
প্রসঙ্গ কাঠামোয় পরিণত হয়েছে। নানান বুদ্ধিবৃত্তিক গবেষণায় এ হেঁয়ালি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান,
জীববিজ্ঞান, বাস্তুবিজ্ঞান এবং দর্শন ইত্যাদি বহুমুখী শাখায় এ নিয়ে অনুসন্ধান উস্কে
দিয়েছে। জ্যোতিঃজীববিজ্ঞান নামক
একটি নতুন শাখায় ফার্মি প্যারাডক্স এবং পৃথিবীর বাইরের প্রাণের সম্ভাবনা সংক্রান্ত আন্তঃবৈষয়িক গবেষণা হচ্ছে।
প্যারাডক্স এর ভিত্তি : ফার্মি হেঁয়ালি হল স্কেল এবং সম্ভাব্যতা ও প্রমাণের অভাবের
মধ্যকার দ্বন্দ্বের ফলাফল। এর পূর্ণতর সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া যেতে পারে:
"""মহাবিশ্বের আকার এবং বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে বহু
সংখ্যক উন্নত বহির্জাগতিক প্রাণের সম্ভাব্য উপস্থিতি। কিন্তু এই ধারণা অযুক্তিযুক্ত
প্রতীয়মান হয়, কারণ পর্যবেক্ষণগত ফলাফল তা সমর্থন করে না।"""
হেঁয়ালিটির প্রথম বিষয়টি হল "আকারের যুক্তি", যার সাথে কিনা বিশাল সব সংখ্যা জড়িত:
আকাশগঙ্গা ছায়াপথে প্রায় ২৫০
বিলিয়ন (২৫,০০০ কোটি বা ১০ ১১ ) এবং দৃশ্যমান মহাবিশ্বে প্রায় ৭০ সেক্সটিলিয়ন (৭ x ১০ ২২) তারকা আছে। যদি এসব তারার
চারপাশে ঘূর্ণায়মান গ্রহসমূহের অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকে তবে
কেবল আকাশগঙ্গা ছায়াপথেই বিপুল সংখ্যক সভ্যতা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ যুক্তিতে
ধরে নেয়া হয়েছে পৃথিবী কোন বিশেষ গ্রহ নয়, বরং এটি অন্যান্য সব গ্রহের মতোই সাধারণ।
ড্রেকের সূত্র :
ডঃ ফ্রাঙ্ক ড্রেক ,যিনি এই সূত্রটি প্রবর্তন করেন,
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার একজন
অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১৯৬০-এর
দশকে বহির্জাগতিক যেসকল সভ্যতাসমূহের সাথে আমাদের যোগাযোগ স্থাপনের সম্ভাবনা
রয়েছে সেগুলোর সংখ্যা প্রণয়নের জন্য এই সূত্রটির অবতারণা করেন। এই সূত্রটির
প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে
নিয়ামকসমূহ বহির্জাগতিক সভ্যতাসমূহের সংখ্যা নির্ণয়ে ভূমিকা রাখে সেই নিয়ামকগুলোর অনিশ্চয়তার পরিমাণ নির্ণয়ে
বিজ্ঞানীদেরকে সহায়তা করা। বর্তমানকালে বিরল পৃথিবী প্রকল্প বা Rare Earth Hypothesis নামীয় তত্ত্ব যা অনুসারে মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান জীবের অস্তিত্ব খুবই বিরল, ড্রেকের তত্ত্বের একটি অন্যতম খন্ডনকারী।
ড্রেকের সূত্র ফার্মি প্যারাডক্সের সাথে
নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। জিন রডেনবারি তার স্টার ট্রেক নামক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে
মহাজাগতিক যুদ্ধে লিপ্ত সভ্যতার প্রদর্শনের মাধ্যমে এই সূত্রের একটি প্রামাণ্য চিত্র
উপস্থাপন করেন।
সূত্র :
N = R*. fp. ne.fl.fi.fc.L
যেখানে:
N - হল আকাশগঙ্গা ছায়াপথের অন্তর্ভুক্ত সেই সকল সভ্যতাসমূহ যাদের দ্বারা প্রেরিত
তাড়িতচৌম্বক নিঃসরণগুলো চিহ্নিত করা যায়। এর ফলে তাদের সাথে আমাদের
যোগাযোগের সম্ভাবনা দেখা দেয়।
এবং
R* - হল বুদ্ধিমান প্রাণের উৎপত্তির জন্য অনুকূল পরিবেশ বিশিষ্ট তারাসমূহ সংগঠনের
হার।
fp - হল সেই সকল তারার ভগ্নাংশ (শতকরা অংশ বা পারসেন্টেজ) যাদের একটি
গ্রহ ব্যবস্থা রয়েছে।
n e - হল, যে সকল তারার গ্রহব্যবস্থা রয়েছে সে সকলতারাপ্রতি গ্রহসমূহের সংখ্যা যাতে জীবন সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
fl - যে সকল গ্রহে জীবন সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ থাকার কারণে সত্যিই প্রাণের আবির্ভাব
ঘটেছে তাদের ভগ্নাংশ (শতকরা অংশ বা পারসেন্টেজ)।
fi - সে সকল প্রাণশীল গ্রহসংখ্যার ভগ্নাংশ (শতকরা অংশ বা পারসেন্টেজ) যে সকল
গ্রহের উপর বুদ্ধিমান প্রাণীর
বিচরণ রয়েছে।
fc - সে সকল প্রাণশীল গ্রহসংখ্যার ভগ্নাংশ (শতকরা অংশ বা পারসেন্টেজ) যে সকল
গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীরাপ্রযুক্তির এতোটুকু উন্নয়ন ঘটিয়েছে যা দ্বারা মহাকাশে সংকেত পাঠানোর
মাধ্যমে তারা নিজেদেরউপস্থিতির কথা জানান
দিতে পারে।
L - হল সে সময়কাল যে সময়কাল ধরে সেই বুদ্ধিমান প্রাণীরা তাদের উপস্থিতির প্রমাণস্বরুপ
নির্ণয়যোগ্য সংকেত পাঠাতে পারে।
চলবে........................
Reference : equetion of ড্রেক
Frank Drake (December ২০০৪)। "The E.T.
Equation, Recalculated"
Follow Us
Were this world an endless plain, and by sailing eastward we could for ever reach new distances