Showing posts with label পদার্থ. Show all posts

কোথা থেকে এলো E=mc^2

কোথা থেকে এলো E=mc^2

E=mc 2 , এই সূত্রটি একটু ব্যাখ্যা না
করলে আপেক্ষিক তত্ত্ব একটু
অসম্পূর্ণই থেকে যায়। সহজ ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করেছি, জটিল বিষয়গুলো বাদ
দিয়েছি।

এই সূত্রটি হচ্ছে বিংশ শতাব্দী কাঁপানো সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। এর কারণ ব্যাখ্যা
করার আগে সূত্রটি একটু ব্যাখ্যা করে নিই। সূত্রে কি বলা হচ্ছে, তা দেখে নিই। এখানে E হচ্ছে
শক্তি, m হচ্ছে বস্তুর ভর আর c হচ্ছে
আলোর গতি বা বেগ। অর্থাৎ, বলা হচ্ছে শক্তি=ভর X (আলোরবেগ) 2 । এর মানে হচ্ছে , একটি
পদার্থের ভর কে বিসর্জন দিয়ে তা শক্তিতে পরিণত করা সম্ভব ও
শক্তিকে ভরে রূপান্তর করা
সম্ভব।

এবার আসি কেন সূত্রটি
শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ?
কারণ :

এক, আগে মনে করা হতো শক্তি ও ভর সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এদের
রূপান্তরের বিষয়টি কেউ কল্পনা
করেন নি। প্রচলিত ছিল, বিশ্ব ব্রহ্মান্ড পদার্থ ও শক্তি আলাদা দুটি বিষয় দ্বারা সৃষ্টি। পদার্থ
হচ্ছে এমন কিছু যার ভর আছে আর
যা জায়গা দখল করে। যেমন আমরা আমাদের সামনে যা দেখি তাই পদার্থ। যেমন, কাঠ,
পাথর, ইট এর মতো যাবতীয় জড় পদার্থ। আবার মানুষ ও অন্যান্য জীব সবই পদার্থ, যা জৈব পদার্থ
দিয়ে তৈরী। এত গেল কঠিন
পদার্থ। আবার আছে পানির
মতোর হাজারো তরল। কিছুপদার্থ আছে যা আমরা দেখি
না, তবে তার চাপ অনুভব করি। যেমন বাতাস। সেটাও ভর আছে, সেটাও জায়গা দখল করে। শুধু
জীবই জৈব পদার্থ দিয়ে তৈরী
নয়, তেল জাতীয় বহু জড় পদার্থ আছে, যেগুলো জৈব পদার্থ। যাই হোক সবই পদার্থ।

এখন শক্তি কোনটি ? শক্তি তাই,
যা পদার্থ নয়। শক্তি হচ্ছে এমন.কিছু, যার ভর নেই, আর যা জায়গা দখল করে না। যেমন
আলো, বিদ্যুৎ, তাপ, চাপ
ইত্যাদি।

পদার্থ বিজ্ঞানে আরো দুটি সূত্র প্রচলিত ছিল, একটি হচ্ছে
ভরবেগের নিত্যতা সূত্র, আরেকটি শক্তির নিত্যতা সূত্র।
এগুলো আমরা অনেকেই যারা বিজ্ঞান পড়েছি, তারা ক্লাস নাইন টেনেও পড়েছি। এগুলোও
একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। এর
আগে ভরবেগ কি তা জেনে নিই। আমরা জানি পদার্থের ভর
থাকবেই, তা কম হোক আর বেশী। এখন পদার্থটি স্থির
থাকলে কোন মাথাব্যথা নেই আমাদের। কিন্তু যা যখন
গতিশীল হবে, তখনই হচ্ছে সমস্যা।
গতিশীল বস্তু মানে এর একটি বেগ থাকবে। এর ভর আর বেগ গুণ
করলে পাওয়া যাবে ভরবেগ। এবার দেখি ভরবেগের নিত্যতা সূত্র কি বলে ?

একটি বস্তু একটি নির্দিষ্ট বেগে গতিশীল,
তাহলে তার একটি ভরবেগ রয়েছে। এখন অন্য কোন একটি
স্থির বা গতিশীল বস্তুর প্রভাবে তার বেগের পরিবর্তন করা হলো। ফলে তার ভরবেগেরও পরিবর্তন
ঘটবে। তাহলে ভরবেগের
নিত্যতা কোথায় ? ভরবেগের
নিত্যতা সূত্র অনুসারে, ঘটনাটি
ঘটার আগে দুটি বস্তুর যে মোট
ভরবেগ ছিল, ঘটনাটি ঘটার পরও
দুটি বস্তুর ভরবেগের যোগফল তাই
হবে।

আর শক্তির নিত্যতা ? এই সূত্রটির
বক্তব্য অনেকটা তাই। এখানে
বলা হয়েছে, মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট। এটি
বাড়বেও না, কমবেও না। শুধু এক
প্রকার শক্তি থেকে আরেক প্রকার শক্তি তৈরী বা রূপান্তর
করা যাবে। রূপান্তরের আগের
মোট শক্তি আর রূপান্তরের পরের
মোট শক্তি সমান।

E=mc 2 দ্বারাই বিজ্ঞানী
আইনস্টাইন প্রথম বললেন, পদার্থের
ভর থেকে শক্তি উৎপাদন করা
যাবে, আর শক্তিকে আবার
ভরেও রূপান্তর করা যাবে। এই
কথাটি উপরের দুটি সূত্রের মূলে
কুঠারাঘাত। তাই নয় কি। এখন
তাহলে উপরের দুটি সূত্র আর
থাকল না, হয়ে গেল দুটি মিলে
একটি। এখন বলতে হবে পৃথিবীর
মোট ভরবেগ আর শক্তির
পরিমাণ স্থির। এটাই E=mc 2
সূত্রটিকে শতাব্দীর সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ বলার প্রথম কারণ।
E=mc 2 সূত্রটি বিংশ শতাব্দী
কাঁপানো বলার দ্বিতীয় কারণ
হচ্ছে, এই সূত্রটি শুধুমাত্র বইয়ের
পাতার সূত্র নয়, এর বাস্তব
ব্যবহারও হয়েছে। এই ব্যবহারই
প্রমাণ করে সূত্রটির সত্যতা। এই
সূত্রের উপর ভিত্তি করেই তৈরী
করা হয়েছিল পারমাণবিক
বোমা বা এটম বোমা, যা
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়
জাপানের হিরোশিমা আর
নাগাসাকি শহরে ফেলা
হয়েছিল আর লক্ষ লক্ষ মানুষের
প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়েছিল।
আর এখনো এর ক্ষতিকর প্রভাব
অনেকের উপর রয়েছে।
তবে কেউ যদি মনে করেন এর জন্য
আইনস্টাইন দায়ী, তিনি এই
বাজে সূত্রটি আবিস্কার না
করলেও পারতেন, তাহলে আমার
আপত্তি আছে। কারণ, আইনস্টাইন
যখন এটি বের করেন, তখন তিনি
বিজ্ঞানী হিসেবে একটি রহস্য
উদঘাটন করেন, যে রহস্য উদঘাটিত
না হলে বা অন্য কেউ তা
আবিস্কার না করলে বিজ্ঞান
১৯০৫ সাল পর্যন্ত হয়তো থেমে
থাকত। আইনস্টাইন মোটেই এর
ক্ষতিকর দিকটি চিন্তা করেন
নি, তার মাথায় সেটা ছিলও
না। এখন যদি কেউ একে খারপ
ভাবে ব্যবহার করে, তাহলে
সেটা তার দোষ। ছুরি দিয়ে
মানুষ হত্যা করা যায়, তার জন্য
ছুরি বা ছুরির নির্মাতা দায়ী
নয়, যে হত্যা করল সেই দায়ী। যে
রহস্যের কথা বলেছিলাম সেটা
শেষে বলবো।
যাই হোক এবার আমরা প্রমাণের
দিকে যাই। এই সূত্রের প্রমাণটি
আসলেই খুব জটিল এবং এর
পেছনে কাজ করছে পদার্থ
বিজ্ঞানে আরো অনেক জটিল
সূত্র। কিন্তু আামি আগেই
বলেছি, আমি
পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্রদের
পড়াতে বসিনি। আমি সাধারণ
মানুষ যাঁরা বিষয়টি নিয়ে একটু
কৌতুহলী, তাদের জন্য লিখছি।
প্রথমেই শক্তির সংজ্ঞা দেখি।
শক্তি হচ্ছে বল ও বল দ্বারা
অতিক্রান্ত দূরত্বের গুণফল। মনে
করি একটি বস্তুর উপর F বল
প্রয়োগ করাতে এটি d দুরত্ব
অতিক্রম করল। তাহলে এতে কি
পরিমাণ শক্তি ব্যায় হলো, তা
হচ্ছে, E = F x d.
এখন মনে করি বলটি এক সেকেন্ড
যাবত প্রয়োগ করা হলো, আর
এতে তার বেগ হলো আলোর
বেগের সমান। সুতরাং এই এক
সেকেন্ডে সে অতিক্রম করবে
আলো গতি প্রতি সেকেন্ডে
যা, সেই পরিমাণ দূরত্ব, মানে c
দূরত্ব। তাহলে, এই এক সেকেন্ডের
জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি হচ্ছে, E =
F x c
আবার আমরা জানি, বল = ভর x
ত্বরণ। আর ত্বরণ = বেগ / সময়।
সুতরাং বল = ভর x বেগ / সময়।
অর্থাৎ, F = m . v / t
এখানেও যদি আমরা ধরে নিই
বেগ আলোর গতির সমান আর
সময় সময় এক সেকেন্ড, তাহলে F =
m x c
F এর এই মানটি E এর সূত্রে বসাই।
E = F x c = m x c x c = mc2
সুতরাং, E=mc 2
কত সহজে প্রমাণ করে দিলাম।
গোঁজামিলই বলতে পারেন।
অথবা সান্তনা।
শেষ করার আসে রিয়েকশন বা
বিক্রিয়া সম্পর্কে একটু বলে
নিই। বিক্রিয়া দুই প্রকার।
রাসায়নিক বিক্রিয়া আর
নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া।
রাসায়নিক বিক্রিয়া হচ্ছে
সেই বিক্রিয়া, যাতে এক বা
একাধিক মৌলিক বা যৌগিক
পদার্থ বিক্রিয়া করে এক বা
একাধিক মৌলিক বা যৌগিক
পদার্থ সৃষ্টি হয়, এবং বিক্রিয়ার
আগে ও বিক্রিয়ার পরে
বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ কারী
পদার্থ সমূহের মূল উপাদান অর্থাৎ
মৌলিক পদার্থ সমূহ একই থাকে,
নতুন কোন মৌলিকের উদ্ভব হয়
না। নিউক্লিয়ার রিয়েকশন
সম্পর্কে একটু পরে বলি।
সবশেষে বলি এই সূত্রের দ্বারা
আইনস্টাইন কি রহস্য ভেদ করলেন ?
রহস্য হচ্ছে শক্তি সৃষ্টির রহস্য।
আমরা শুনেছি সকল শক্তির উৎস
সূর্য। কিন্তু সূর্যের এত শক্তি
কোথা থেকে আসে ? অনেকে
মনে করতে পারেন, সূর্যের এই
তাপ শক্তি কি সূর্যে জমানো
আছে। আসলে তা নয়, শক্তি
সূর্যেই আছে, তবে তাপ
হিসেবে নয়, ভর হিসেবে। প্রতি
মূহুর্তে সূর্য তার ভর থেকে শক্তি
উৎপাদন করছে আর চারদিকে
সেই শক্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ফলশ্রুতিতে সে ভর হারাচ্ছে। এই
সত্য শুধু সূর্যের জন্যই নয়, সকল
নক্ষত্রের জন্যই তাই। নক্ষত্রের
প্রতি দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু
মিলে একটি হিলিয়াম পরমাণু
তৈরী হয়, তবে তার ভর হয় দুটি
হাইড্রোজেন পরমাণুর ভরের
যোগফলের চেয়ে সামান্য কম।
এই হারিয়ে যাওয়া ভরটিই
আসলে তাপ শক্তিতে পরিণত হয়।
এটি একটি নিউক্লিয়ার
রিয়েকশন। নিউক্লিয়ার
রিয়েকশন হচ্ছে সেই বিক্রিয়া,
যেটাতে বিক্রিয়ার পর নতুন
মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি হয়। যে
ধরণের নিউক্লিয়ার রিয়েকশনে
দুটি পরমাণু ভেঙে একটি পরমাণু
হয়, সেগুলোকে বলে ফিউশন।
এটম বোমায়ও নিউক্লিয়ার
রিয়েকশন হয়। সেখানে হয়
উল্টা। একটি পরমাণু ভেঙে দুটি
পরমাণু সৃষ্টি হয়। এ ধরণের
রিয়েকশনকে বলে ফিশন।
এখানে একটি ইউরেনিয়াম
পরমাণু ভেঙে একটি বেরিয়াম ও
একটি ক্রিপটন পরমাণু তৈরী হয়।
আর তৈরী হয় প্রচুর শক্তি। যাক,
জানার আরো অনেক কিছুই
আছে, কিন্তু আমি এখানে শেষ
করলাম।